বৃষ্টি (ফররুখ আহমদ)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা সাহিত্য কবিতা | - | NCTB BOOK
598
598

বৃষ্টি এলো ... বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি ! – পদ্মা মেঘনার

দুপাশে আবাদি গ্রামে, বৃষ্টি এলো পূবের হাওয়ায়,

বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়;

বিদ্যুৎ-রূপসী পরী মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার।

দিকদিগন্তের পথে অপরূপ আভা দেখে তার

বর্ষণ-মুখর দিনে অরণ্যের কেয়া শিহরায়,

রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত আজ তার স্পর্শ পেতে চায়,

নদীর ফাটলে বন্যা আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার।

রুণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন

রুক্ষ মাঠ আসমান শোনে সেই বর্ষণের সুর,

তৃষিত বনের সাথে জেগে ওঠে তৃষাতপ্ত মন,

পাড়ি দিয়ে যেতে চায় বহু পথ, প্রান্তর বন্ধুর,

যেখানে বিস্তৃত দিন পড়ে আছে নিঃসঙ্গ নির্জন

সেখানে বর্ষার মেঘ জাগে আজ বিষণ্ন মেদুর ॥
 

common.content_added_and_updated_by

কবি পরিচিতি

252
252

ফররুখ আহমদ ১৯১৮ সালের ১০ই জুন মাগুরা জেলার মাঝআইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা খান সাবের সৈয়দ হাতেম আলী। ফররুখ আহমদ কলকাতা রিপন কলেজ থেকে আই. এ. পাস করেন এবং কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শনে অনার্স ও ইংরেজিতে অনার্সের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়েই কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। কর্মজীবনে তিনি নানা পদে নিয়োজিত হন এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বেতারে স্টাফ রাইটার পদে নিয়োজিত ছিলেন। ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্য তাঁকে কাব্যসৃষ্টিতে প্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : সাত সাগরের মাঝি, সিরাজাম মুনীরা, নৌফেল ও হাতেম, মুহূর্তের কবিতা, পাখির বাসা, হাতেমতায়ী, নতুন লেখা, হরফের ছড়া, ছড়ার আসর ইত্যাদি । সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, একুশে পদকসহ (মরণোত্তর) অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭৪ সালের ১৯শে অক্টোবর তিনি পরলোকগমন করেন।
 

common.content_added_by

শব্দার্থ ও টিকা

287
287

 বিদ্যুৎ রূপসী পরী – বিদ্যুৎ চমকানোকে লোকজ ধারণা অনুযায়ী সুন্দরী পরীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যে মেঘে মেঘে ঘুরে বেড়ায়।

সওয়ার – আরোহী।

রুগ্‌ণ বৃদ্ধ ভিখারির ... তৃষ্ণাতপ্ত মন – দীর্ঘ বর্ষণহীন দিনে মাঠঘাট শুকিয়ে যে রুক্ষ মূর্তি ধারণ করেছে কবি তাকে রুগ্‌ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এখন বর্ষণের শুরুতে তৃষ্ণাকাতর মাঠ-ঘাট ও বনে দেখা দিয়েছে প্রাণের জোয়ার।

তৃষাতপ্ত – পিপাসায় কাতর। বিষণ্ণ মেদুর – বৃষ্টিবিহীন প্রকৃতির রুক্ষতা বৃষ্টির আগমনে দূরীভূত হয়েছে। প্রকৃতি এখন স্নিগ্ধকোমল হয়ে চারিদিক করে তুলেছে প্রাণোচ্ছ্বল ।
 

common.content_added_and_updated_by

পাঠ পরিচিতি

617
617

‘বৃষ্টি' কবিতাটি ফররুখ আহমদের মুহূর্তের কবিতা কাব্য থেকে সংকলিত হয়েছে। কৃষিপ্রধান বাংলার বহুপ্রতীক্ষিত বৃষ্টি নিয়ে কবিতাটি লিখিত। প্রকৃতিতে বর্ষা আসে প্রাণস্পন্দন নিয়ে। আর বৃষ্টিই বর্ষার প্রাণ। এ সময় নদীর দু-ধারে প্লাবন দেখা দেয়, ফলে পলিমাটির গৌরবে ফসল ভালো হয়। বৃষ্টির সময় আকাশের সর্বত্র মেঘের খেলা দেখা যায়, বর্ষার ফুল ফুটে সর্বত্র মোহিত হয়, রুক্ষ মাটি বৃষ্টিতে প্রাণ জুড়ায়। বৃষ্টির দিনে সংবেদনশীল মানুষও রসসিক্ত হয়ে ওঠে। তার মনে পড়ে সুখময় অতীত, পুরনো স্মৃতি, আর সে ভালোলাগার আলপনা আঁকে মনে মনে । এ বৃষ্টি কখনো বিষণ্নও করে মন, একাকী জীবনে বাড়ায় বিরহ। সুতরাং বৃষ্টি শুধু প্রাকৃতিক ঘটনা বা প্রাকৃতিক পালাবদলের নিয়ামক নয়, এর সঙ্গে ব্যক্তির জীবনও কতটা সম্পৃক্ত তারই কাব্যরূপটি কবিতায় ফুটে উঠেছে।
 

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion